সম্পদশালী শহরের তালিকায় আমিরাতের দুই শহর

বিশ্বের সম্পদশালী বা ধনী শহরের শীর্ষ তালিকায় স্থান নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) জনবহুল ও আলোচিত দুই শহর। লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স সম্পদশালী শহর নিয়ে করা তালিকায় এ দুই শহর উঠে এসেছে।

তালিকায় ইউএইর সবচেয়ে জনবহুল ও আলোচিত শহর দুবাইয়ের অবস্থান তৃতীয়। আর দশম অবস্থানে রয়েছে আবুধাবি। সহজ ভিসা ও করমুক্ত সুবিধা নিয়ে দেশটির জাঁকজমকপূর্ণ শহরগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ায় এই দুই শহর শীর্ষ ধনী শহরের তালিকায় উঠে আসে।

তালিকা তৈরিতে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের সঙ্গে ছিল আফ্রিকার সংস্থা নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ। বৈশ্বিক ব্যক্তিগত সম্পদ ও বিনিয়োগসংক্রান্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে সংস্থা দুটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

‘ব্রিকস ওয়েলথ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুবাইয়ে ধনকুবের রয়েছেন ৭২ হাজার ৫০০ জন। আছেন ২১২ জন সেন্টি-মিলিয়নেয়ার ও ১৫ জন বিলিয়নেয়ার। অন্যদিকে আবুধাবিতে ধনীর সংখ্যা ২২ হাজার ৭০০ জন, যাদের ৬৮ জন সেন্টি-মিলিয়নেয়ার ও পাঁচজন বিলিয়নেয়ার। যাদের বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি ডলার বা তার বেশি, এমন ধনীদের সেন্টি-মিলিয়নেয়ার বলা হয়। ১০ লাখ ডলার বা তার বেশি সম্পদের মালিক ব্যক্তিদের মিলিয়নেয়ারের তালিকায় রাখা হয়েছে।

তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ব্রিকসের বড় অর্থনীতির দেশ চীনের পাঁচ শহর। সবচেয়ে ধনী শহরের তালিকার শীর্ষে আছে চীনের রাজধানী বেইজিং। শহরটিতে ১ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ জন ধনকুবের আছেন। যাদের মধ্যে ৩৪৭ জন সেন্টি-মিলিয়নেয়ার ও ৪২ জন বিলিয়নেয়ার। বেইজিংয়ের পর দ্বিতীয় স্থানে আছে সাংহাই। সেখানে সম্পদশালী ব্যক্তি রয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ জন। চতুর্থ ও পঞ্চম নম্বরে আছে যথাক্রমে ভারতের মুম্বাই ও চীনের শেনজেন।

দুবাই ও আবুধাবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সম্পদ বাড়ছে ইউএইর আরেক শহর শারজায়। এখানেও বিনিয়োগ বৈচিত্র্যকরণ নীতি নিয়েছে দেশটির সরকার। নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথের গবেষণাপ্রধান অ্যান্ড্রু অ্যামোয়েলস বলেন, ‘‌দুবাই ও আবুধাবির তুলনায় ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব অনেক কম থাকা সত্ত্বেও মিলিয়নেয়ার বৃদ্ধির হারে এগিয়ে আছে শারজা।’

শারজায় বর্তমানে ৪ হাজার ১০০ জন মিলিয়নেয়ারের বসবাস। ২০৩৩ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ১২০ শতাংশ বেড়ে নয় হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ অর্থনীতি সৌদি আরবের দুই শহর রিয়াদ ও জেদ্দায় পরবর্তী দশকে কোটিপতির সংখ্যা বাড়বে। পূর্বাভাস অনুসারে, রাজধানী রিয়াদে ৯০ শতাংশ ও জেদ্দায় সম্পদশালীর সংখ্যা বাড়বে প্রায় ১০০ শতাংশ।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইরান ও ইথিওপিয়ার সঙ্গে ব্রিকস জোটে যোগ দেয় সৌদি আরব। নতুন পাঁচ দেশের যোগদানে অর্থনৈতিক জোটটির আকার দ্বিগুণ হয়েছে। ১০ সদস্য দেশের মধ্যে শুরুর পাঁচ দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

গত জুনে হেলনি অ্যান্ড পার্টনার্সের এক পৃথক প্রতিবদনে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত গত বছর আরো ৪ হাজার ৫০০ মিলিয়নেয়ার আকর্ষণ করবে বলে আশা করেছিল। মিলিয়নেয়ার আকর্ষণের পূর্বাভাসে অস্ট্রেলিয়ার পরই দ্বিতীয় অবস্থান করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত ইউএইর। একই বছর বিশ্বব্যাপী ৫ হাজার ২০০ সম্পদশালীকে আকর্ষণ করেছে অস্ট্রেলিয়া।

হেলনি অ্যান্ড পার্টনার্সের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৩ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে দেশটিতে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ ধনকুবেরের বাস। তাদের মধ্যে সেন্টি-মিলিয়নেয়ার ৩০০ জন।

গবেষণা বলছে, গত এক দশকে সৌদি আরব ও ইথিওপিয়ায়ও ব্যক্তিগত সম্পদশালীর সংখ্যা বেড়েছে। দেশ দুটিতে মিলিয়নেয়ার যথাক্রমে ৩৫ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

ব্যক্তিগত সম্পদের পাশাপাশি মাথাপিছু সম্পদ বৃদ্ধির পূর্বাভাসে ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে ভারত। ২০৩৩ সালের মধ্যে দেশটির মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ১১০ শতাংশ বাড়তে পারে।

গবেষণা বলছে, আগামী ১০ বছরে সৌদি আরবের মাথাপিছু সম্পদ ১০৫ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। ৯৫ শতাংশের পূর্বাভাস নিয়ে এর পরের অবস্থানে রয়েছে ইউএই। এছাড়া চীন, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মিসর আগামী দশকে ৫০ শতাংশের বেশি সম্পদ বৃদ্ধি উপভোগ করবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিকস ব্লকে বর্তমানে মোট বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের পরিমাণ ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার। যেখানে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা আগামী ১০ বছরে প্রায় ৮৫ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এ গ্রুপে বর্তমানে ১৬ লাখ ব্যক্তি রয়েছে, যাদের বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ ১০ লাখ ডলারের বেশি। এদের মধ্যে সেন্টি-মিলিয়নেয়ার ৪ হাজার ৭১৫ জন ও ৫৪৯ জন বিলিয়নেয়ার।

শেয়ার করুন:-

সম্পর্কিত খবর