এনআরবিসি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে বড় অনিয়ম!

বেসরকারি এনআরবিসি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ব্যাংকটির তিন স্বতন্ত্র পরিচালক নিজেদের স্বার্থে এবং লুটপাটে সহায়তার কাজ বেগবান করছে। স্বতন্ত্র পরিচালক পদে আসীন হওয়ার যোগ্যতা না থাকার পরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম-নীতি সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করে রাদ মুজিব লালন নামের একজনকে এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। ফলে ব্যাংকটির দুর্নীতির কতৃত্ব আরও বেগবান হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকেরা।

রোববার (৩ নভেম্বর) ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এসব তথ্য জানা গেছে। ব্যাংকটির ৯ উদ্যোক্তা পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

চিঠিতে বলা হয়, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও এনআরবিসি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তৌফিক রহমান চৌধুরী এবং তার অনুগত মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক একঝাঁক লুটেরা কর্মকর্তাদের কয়েকধাপ পদোন্নতি দিয়ে এই ব্যাংকে তার দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে পদায়ন করে দুর্নীতির যাত্রা শুরু করেছিলেন। আর এই দুর্নীতির মাত্রা কয়েকগুন বেড়ে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপে বহুমুখী নতুনত্বের দীর্ঘস্থায়ী রূপ লাভ করে এই ব্যাংক লুটেরা তমাল-আদনানের কর্তৃত্বে। যারা মাফিয়া স্টাইলে সাব-মেশিনগান দিয়ে ব্যাংক দখল করেছিলেন।

এতে বলা হয়, তমাল-আদনান চক্র ব্যাংক দখল করে এখনো পর্যন্ত তাদের লুটের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে, তারা হলো অতিশয় ধূর্ত ও স্মার্ট ব্যাংক লুটেরা ডাকাত চক্র ও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার লুটেরা চক্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত। যারা এখনো ব্যাংকের কর্তৃত্ব নিজের হাতে রেখেছে।

সূত্র জানায়, গত ১৪ অক্টোবর ব্যাংকের ১৯০তম পর্ষদ সভায় তমালের নিজস্ব পরিকল্পনায় তার অনুগত স্বতন্ত্র পরিচালক রাদ মুজিব লালনকে সকল প্রকার নিয়ম-নীতি লঙ্ঘনের মাধ্যমে ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে নিজের একক কর্তৃত্ববাদ বহাল রাখে। অথচ এ নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়।

জানা যায়, এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাদ মুজিব লালনের বয়স ৩৮ বছর। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিপত্র ও প্রবিধান অনুযায়ী, এ পদে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৪৫ বছর বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মের তোয়াক্কা করেনি তমাল-আদনান চক্র। এছাড়া রাদ মুজিব আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের দোসর হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দল সমার্থক শিক্ষক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। পাশাপাশি এনআরবিসি সিকিউরিটিজের দায়িত্বে থাকাকালীন তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠানটিকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করে।

সূত্র বলছে, রাদ মুজিব ছাড়াও অন্যান্য স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে অনিয়মের মেলা বসিয়েছে তমাল-আদনান চক্র। যার একজন আবু এশরার। আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া এ পরিচালকের শিক্ষাগত যোগ্যতায় ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবু এশরারের পোস্ট গ্রাজুয়েশনের পরিবর্তে শুধুমাত্র গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি বিবেচনায় এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে বহাল রেখেছে লুটেরা তমাল-আদনান চক্র।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রাদ মুজিব এবং আবু এশরার তমাল-আদনানের লুটপাটের সঙ্গী হিসেবে তাদের অপকর্মকে চলমান রেখেছে। এছাড়া ব্যাংকের সকল নিয়োগ বাণিজ্যে এই দুই পরিচালক নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে এবং আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের সকল অবৈধ কর্মকান্ড চলমান ও বেগবান রাখতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বিনিময়ে নিজেরা ব্যাংক থেকে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা ও লুটপাটে নিজেদেরকে শামিল করে লাভবান হয়েছে। এসব পরিচালক শুধুমাত্র মিটিংয়ে উপস্থিতি ভাতার বাইরেও প্রতিমাসে ২-৫ লক্ষ টাকা করে মাসোহারা নিচ্ছে আলোচিত জাফর ইকবাল হাওলাদারের দুর্নীতি লব্ধ একাউন্ট থেকে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল প্রকার নিয়ম-নীতির লংঘন।

ব্যাংকের অপর স্বতন্ত্র পরিচালক আব্দুল মান্নানও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের উপশাখাগুলো খুলতে সহায়তা করেছে। এর বিনিময়ে ব্যাংকের পরিচালকের পদটি বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

অস্থিতিশীল পরিস্থিতির আলোকে ও সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ও সুশাসনের কথা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকটির পর্ষদ অনতিবিলম্বে পুনর্গঠন করতে গভর্নরকে অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকেরা। একইসঙ্গে চিঠিতে ব্যাংকের লুটপাট-সুশাসন নষ্ট করা চেয়ারম্যান ও ম্যানেজমেন্টের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাদের অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

শেয়ার করুন:-

সম্পর্কিত খবর